ক্ষুরা রোগ
ক্ষুরা গবাদিপশুর একটি মারান্তক ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। এইরোগে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, শুকুর ইত্যাদি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রোগ ছড়ানোর মাধ্যমঃ ক্ষুরারোগে আক্রান্ত পশু। আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে থাকা মানুষের জামা, জুতা ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাছাড়া বাতাসের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। পশু কেনা বেচার হাট বাজার সমূহ এই রোগ ছড়ানোর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ক্ষুরা একটি ট্রান্সবাউন্ডারী ডিজিজ এবং দিনাজপুর একটি সীমান্তবর্তি জেলা ফলে অনেক সময় চোরাইপথে রোগাক্রান্ত পশু সীমান্ত পেরিয়ে জেলায় ঢুকে পড়লে এইরোগের বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণঃ আক্রান্ত পশুর প্রথমে জ্বর আসে, মুখে ঘা (ব্লিস্টার) দেখা দিলে প্রচুর লালা ঝরতে থাকে এবং চপচপ শব্দ করতে থাকে। খাওয়া বন্ধ করে দেয়। পায়ে ঘা দেখা দেয় ফলে গরু ঠিকমত হাঁটতে পারে না, বারে বারে পা ঝাড়তে থাকে। অনেক সময় দুগ্ধবতি গাভির ওলানে এবং বাঁটে ফোসকা দেখা দেয়। ছোট বাছুর টাইগার হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ফলে অনেক সময় হঠাৎই বাছুরের মৃত্যূ হয়। বড় পশুর অধিক লালা ঝরার কারণে পানি শুন্যতা হয় এ কারণে কখনও কখনও পশুর মৃত্যু হতে পারে।
করণীয়ঃ প্রথমে অসুস্থ পশুকে সুস্থ্ পশু থেকে আলাদা করতে হবে। পরিচর্যার সময় প্রথমে সুস্থ পশুকে তারপর অসুস্থ পশুকে যত্ন নিতে হবে। সম্ভব হলে আলাদা লোক দিয়ে পরিচর্যার ব্যবস্থা হরতে হবে। যেহেতু এই রোগে পশুর মুখে ফোসকা পড়ে ঘা হয় তাই মুখে সোহাগার খৈ গুড়ো করে মধু অথবা ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩বার লাগাতে হবে। কিংবা খাওয়ার সোডার ( ১ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম) পানি দিয়ে দিনে ২ বার ক্ষত স্থান ধুয়ে দিতে হবে। বারে বারে নরম কিংবা তরল খাবার খাওয়াতে হবে। পায়ের ক্ষতস্থানে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর পানি দিয়ে অথবা যে কোন জীবানু নাশক ( ফার্ম-৩০, ভাইরোসিড, জিপিসি- ৮, টিএইচ-৪) দিয়ে ধুয়ে দিতে ও গোয়াল ঘর স্প্রে করতে হবে এবং পায়ে বোরিক পাউডার বা সালফানিলামাইড পাউডার লাগাতে হবে এবং মাছি নিরোধক ন্যাপথেলিন কিংবা তারপিন তেল লাগাতে হবে। পশুর শরীরে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমন প্রতিরোধে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক সহ অন্যান্য ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
তাই এই রোগের প্রকোপ এবং আর্থিক ক্ষতি কমাতে দ্রুত নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে ও পরামর্শ নিতে হবে। সকল সুস্থ পশুকে নিয়মিত ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। বেশী লাভের আশায় বাজার হতে কোনভাবেই রোগাক্রান্ত পশু কিনে আনা যাবে না। এমনকি সুস্থ পশু কিনে আনলেও কমপক্ষে ১৫দিন আলাদাভাবে রেখে টিকা প্রয়োগ করে খামারে প্রবেশ করাতে হবে।
আপনার গবাদিপশু ও হাঁস মুরগী পালন বিষয়ে যে কোন পরামর্শের জন্য নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন প্রয়োজনে ১৬৩৫৮ নম্বরে টোল ফ্রি এসএসএম করুন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস